hey jude 2018 cover

তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে ।

লালনের গাওয়া এই কয়টা লাইনের মর্মার্থ বোঝা আমার সাধ্যিতে নেই। এই লাইনগুলোর মর্মার্থ উদ্বার করার চেষ্টা করলে যেমনটা দাড়ায়,

Advertisements

“আমরা সবাই পাগল!”-এ কি বলে শুরু করলাম ভাই! ছোট থাকতে কোন বন্ধুর সাথে যখন রাগারাগি হতো তখন কেউ যদি বলতো “তুই পাগল”, তাহলে তার পরের লাইনটি হতো “তুই পাগল, আমার থেকে তুই দ্বিগুন পাগল” বন্ধু তখন বলতো “তুই তিনগুন পাগল” এভাবে চলতে থাকতো যতক্ষন-না তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে থামতো। এমনো হতো অজুত কোটিতে চলে যেতো। আর আজকের দিনে কেউ যদি বলে মুখে হাঁসি থাকলেও মনে-মনে “তুই পাগল, তোর চেীদ্দ গুষ্টি …..” পুরা জাত-পাত সব উদ্ধার করেই ছাড়। আপনিও হয়তো সবাইকে পাগল বলার দরুন, আমাকেও সাথে সাথে পাগল বলে পাগলামোটা করে ফেলেছেন।

আসলে আমরা সবাই পাগল। কেউবা ক্রিকেটের , কেউবা ফুটবলের, কেউবা অর্থের কেউবা বিত্তের আবার কেউ-কেউ ক্ষমতার( সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষন করলে বুঝতে পারবেন)। নাহ আমি এতে ভূল কিছু দেখিনা সেটা ক্ষমতা, অর্থ , ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। আমাদের জীবনটা ছোট, এই ছোট পরিসরের জীবনে একটু পাগলামো করাই যায়। গ্রামে একটা কথা বলে “আজ মরলে, কাল দুইদিন”। নাহ আমি আপনাকে মোরাল শেখাতে আসিনি, আপনাকে মনুষত্ব শেখানোর জন্য আমাদের ধর্ম , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা গুরুজনেরা উদার হস্তে বসে আছেন। চাহিবা মাত্রই দিতে বাধ্য থাকিবেন 😛

নিজের পাগলামোর বর্ননা একটু পরেই দেই আসি মূল কথায়: আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ কিছু বিশেষ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত, যাদেরকে আমি বা আপনি একটু আলাদা চোখে দেখি। এরা আমার আপনার মতোই দুই হাত-দুই পা-ওলা মানুষ কিন্তু আবেগ অনুভূতির দিক থেকে কিছুটা অস্বাভাবিক। মাফ চাইছি! “অস্বাভাবিক” শব্দটা ব্যাবহার করা মোটেও উচিত হয়নি। আমরা আমাদেরকে সবসময় স্বাভাবিক মনে করি, আর তাকেই স্ট্যান্ডার্ড বা মান ধরে অন্যদের বিচার করতে বসে যাই। হিসেবে একটু গরমিল হলেই, “অস্বাভাবিক”। যে বিষয়টাকে আমি আপনি ঠাট্টা-মশকরা মনে করে থাকি সে বিষয়টা হয়তোবা একজন বিশেষ বৈশিষ্ঠ্যের লোকের কাছে সাধারন মনে হবে। দুষ্টুমি করার চলে হয়তো বলে ফেললেন. “যাহ! দূরে গিয়া মর” একজন অটিজম আক্রান্ত লোকের কাছে এটা ভাত খাও, টেবিলে যাও আর দশটা কথার মতোই একটি আদেশ। সুতরাং হয়তোবা কাল বিলম্ব করবেনা আপনার কথার অনুসরন করতে। এদের কাছে আপনার বলার ভঙ্গি বা মুখাবেগের কোন দাম নেই কারন সে সেটা বুঝতে পারেনা। একটা বাচ্চা ছেলে যেমন সোনা আর জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, ঠিক কিছুটা তেমন। আরেকধরনের মানুষ আছে যারা তাদের আবেগ অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না, এই হাঁসিতো এই রাগী-বদমেজাজী। যাদের আবেগের পরিবর্তন হতে স্থান, কাল, পাত্র কোন উপষর্গের প্রযোজন পড়েনা। এ ধরনের সমস্যায় ভোগাকে বাইপোলার ডিসওর্ডার বলে। দু:খজনক হলেও সত্য আমরা প্রায়শই এদেরকে পাগল বলে ভূল করি, হাসি-ঠাট্টা করি কিংবা দয়া দেখাই। কিন্তু আপনার দয়া এদের জন্য কাজে দেয়না বরং ক্ষতি করে। কারন, দয়া বা সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে এদেরকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলেন। যা তাদের চোখে তাদেরকে ছোট করে দেয়।

এমন ক্ষেত্রে আমাদের, তাদেরকে দয়া বা সহানুভূতির বদলে ভালবাসা উচিত। আর দশজনের মতো সমানভাবে তাদের সাথে আচরন করা উচিত। একটু ভালবাসা আর সম্মানবোধ তাদের এই বিশেষ অবস্থা থেকে কেটে উঠতে সাহায্য করে।

[imdb]https://www.imdb.com/title/tt6385856/ [/imdb]

অভিনয়ের দিক থেকে মালায়লাম অভিনেতা-অভিনেত্রিদের জুড়ি মেলা ভার। আর সেটা যদি নিভিন পেীলির মত অভিনেতার অভিনয় শৈলী প্রকাশ করতে গিয়ে বলতে হয় তাহলেতো সোনায় সোহাগা। একজন স্বাভাবিকের মাঝে-অস্বাভাবিকের আচরন পুন:পোনিকভাবে তুলে ধরা কতটা কঠিন হতে পারে সেটা নিভিনের Njandukalude Nattil Oridavela বা কাঁকড়া সাম্রাজ্যে অবকাশ কিংবা Hey Jude দেখলেই বোঝা যায়। গল্প চয়নের ক্ষেত্রে নিভিনের পছন্দ বরাবরই প্রশংসার দাবিদার যেমন: Njandukalude Nattil Oridavela বা কাঁকড়া সাম্রাজ্যে অবকাশ: ক্যান্সার রোগিবা এ জাতীয় কঠিন রোগে আক্রান্তদের প্রতি আমাদের কেমন আচরন করা উচিত তা সম্পর্কে সচেতন করে দেয়। রিচি ছবিতে একটু-আধটু শুনে-দেখেই যে কাউকে বিচার করার বদঅভ্যাস সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে আর Hey Jude বিশেষ গুনসম্বলিত মানুষগুলোর সাথে আচরিত আচরন সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। এতো “সাবধান” শুনে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই প্রতিটি গল্পেই হাসি ঠাট্টার মাধ্যমেই তুলে ধরা হয়েছে যাতে আপনার মনে না হয় কেউ আপনাকে লেকচার দিচ্ছে! আর যা-ই হোক টাকা দিয়ে লেকচার শুনার মত সময় কার আছে। কিছু সিরিয়াস বিষয়কে কত সহজ করে হাসি ঠাট্টার চলে পরিবেশন করা যায় এই কয়টি গল্প তথা সিনেমা তাঁর যোগ্য প্রমান।

অন্য সবাই-ই ভাল অভিনয় করেছে তাই বিশেষভাবে কাউকে উপস্থাপন করছিনা। গল্পের চুলচেরা বিশ্লেষন আমার সাথে খুব একটা যায়না তাই তা-ও বাকিই থাক। নিজের ভাবাবেগ সবার সাথে ভাগ করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। সাইফুদ্দিন শাকিলকে Hey Jude -এর বাংলা সাবের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আর হ্যাঁ এই ছোট পরিসরের জীবনে একটু পাগলামো করাই যায়! আকাশ চুঁয়ে দেখতে না পারলেও দিগন্তের কাছে যাওয়ার পাগলামো করতেই পারি। সাগরের মতো বিশাল না হতে পারলেও সাগরের বিশালতায় হারাতেই পারি। সুখী না হতে পারলেও সুখের ফেরিওয়ালা হতেই পারি, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো “মিস্ত্রির ঘর ভাঙ্গাই থাকে”।

2 thoughts on “Hey Jude – পাগলের খোঁজ”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।